বাক্‌ ১২০ ।। প্রদোষ পাল ।। অ্যাবরেশন



।।  অ্যাবরেশন ।।

প্রদোষ পাল

কোনো মফস্বল শহরে ঢুকতে রাস্তার দুধারে বিচিত্র নামের যে সব বড় বড় সাইন বোর্ড সবার আগে চোখে পড়ে তা হলো 'নার্সিং হোম'-এর অগণিত অবৈধ এমন নার্সিংহোম ক্রমাগত ফুলে ফেঁপে উঠছে মূলত কী কারণে? বোধহয় কারো জানতে বাকি নেই! ২৫/৩০ বছর আগে এমন এক মফস্বল শহরের নার্সিং হোমে কর্মরত আয়ার কাছ থেকে শুনেছিলুম, মূলত অ্যাবরেশন করেই নাকি ওদের বাড়বাড়ন্ত! বর্ধিষ্ণু শহরের নার্সিংহোম-গুলো প্রায় এই সব অবৈধ কর্ম করেই দুহাতে টাকা কামাচ্ছে ২৫/৩০ বছর আগের চিত্রটা যদি এমন হয়, বর্তমানে কী চেহারা নিয়েছে সহজেই অনুমেয় আর যাই হোক সময় ছেলে মেয়েদের এতো অবাধ মেলামেশা ছিল না তখনও ভিক্টোরিয়া, ইডেন গার্ডেনসে এতো খুল্লামখুল্লা প্রেম চোখে পড়েনি এখন যেন পথচলতি মানুষকে ইচ্ছে করে দ্যাখানোর জন্যই নিজেরা আরও নিবিড় হয়ে পড়ে দেখলেই বোঝা যায়, প্রেম নয়, প্রেমের ভান এবং এই প্রেমের স্থায়ীত্বও বোধহয় কয়েক মাস বা বছরের বেশি নয়! অ্যাবরেশন আজকাল কত জলভাত হয়ে গ্যাছে, তা বোধহয় বলার দরকার নেই একটা সময় মহিলাদের রক্ষনশীলতা কিছুটা হলেও বিবাহ-পূর্বে যৌন-মিলনে বাধা দিত বর্তমানে তেমন ব্যারিকেড খুব একটা আছে বলে মনে হয় না যদিও এটা দোষের কিছু নয় কিন্তু অনেকসময় সরলমনা মেয়েরা লম্পট ছেলেদের দ্বারা প্রতারিত হয় অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোরী-রাও নিজেদের জীবনে ডেকে নিয়ে আসে চরম সর্বনাশ!

৩০ বছর আগে ওই আয়ার কাছে নার্সিং হোম ফুলে ফেঁপে ওঠার কারণ যদি পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রাম্য শহরের চিত্র হয়, ইউরোপের কোনো এক দেশের কোনো শহরের চিত্রটা তবে কেমন হতে পারত? অনুমান হয়তো করা যেতে পারে, বাস্তবটা জানা সম্ভব নয় তবে আমি কিছুটা আভাস পেলুম একটি সিনেমা দেখে তা নিয়েই বরং আলোচনা করি

দেশটার নাম রোমানিয়া সে দেশের কমিউনিস্ট শাসনের শেষ বছরের (১৯৮৭) ঘটনা অ্যাবরেশন সে দেশে তখন মারাত্মক অবৈধ অপরাধের কাজ বলে গন্য হতো ধরা পড়লে পাক্কা দশ বছরের জেল আলোচনার শুরুতেই যেটা বলছিলুম,  বিষয়ে আমাদের এখানের অবস্থাটা তবে কী? একের পর এক নার্সিংহোম গড়ে উঠছে সবার চোখের সামনে যা অধিকাংশ শুধু অবৈধই নয়, অ্যাবরেশনের মতো অবৈধ কাজকর্ম চালিয়েই যাদের রমরমা অথচ রোমানিয়ার মতো উন্নত দেশে যা মারাত্মক অপরাধের! সেখানে এতো কড়াকড়ি? এটাকে কেউ পজিটিভ ভাবে নিতে পারেন আবার না নিতে পারেন কেউ বলতে পারেন, বেশ করেছি আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে যা করেছি ঠিক করেছি পরে অ্যাবরেশনের প্রয়োজন পড়লে করবো তুমি বাধা বা শাস্তি দেওয়ার কে? কেউ বলতে পারেন, এই আকছার সুযোগই বহু নারীপুরুষের জীবনে অন্ধকার ডেকে আনছে চাইলেই অ্যাবরেশনের ব্যবস্থা যদি হাতের কাছে থাকে, তবে এই প্রবণতা বাড়ারই কথা প্রাপ্তবয়স্ক হলেও অবাধ সুযোগ মানুষকে এমন করতে উৎসাহ জোগায়, যা ভবিষ্যৎ জীবনে ডেকে আনে দুঃসময়! বাধা বা শাসন থাকলে অনেক অপকর্ম কিছুটা হলেও ঢাকা যায়

যাক সে বিতর্ক, আলোচনায় ফেরা যাক

রোমানিয়ার একটি শহরে ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে দুজন ছাত্রী ওতিলিয়া গাবিতা একই ঘরে থাকে গাবিতা প্রেগনেন্ট হয়ে পড়েছে যে ভাবেই হোক অ্যাবরেশন করা ছাড়া উপায় নেই অথচ যেখানে অ্যাবরেশন মারাত্মক অপরাধের মধ্য পড়ে কী করবে দুই বান্ধবী?

প্রথম দৃশ্যে ২১/২২ বছরের একটি ছিপছিপে মেয়েকে নার্ভাস ভাবে বসে থাকতে দ্যাখা যায় হোস্টেলের খাটে চারদিকে জিনিসপত্র ছড়ানো ছেটানো এককথায় কোনো শ্রী নেই ঘরের সাধারণত যেমন হোস্টেলের রুম হয় আর কীমেয়েটির নাম গাবিতা গ্যাব্রিয়েলা প্রথমে ক্যামেরার ফ্রেমে শুধু গাবিতাকেই ধরা হয়েছে কথোপকথন থেকে আর একজনের অস্তিত্ব বোঝা যায় গাবিতা টেবিলের জিনিসপত্র আস্তে আস্তে নামাতে থাকে বান্ধবীকে বলে সাহায্য করতে এবার ক্যামেরার ফ্রেমের মধ্যে ওতিলায়ার প্রবেশ সেও ছিপছিপেপ্রায় একই বয়সের দুজনে টেবিলের সমস্ত জিনিস নামায়, এবং প্লাস্টিকের টেবিলক্লথ ভাঁজ করে পাশের সোফায় রাখে 

কিছুক্ষন পর ওতিলিয়া বাইরে থেকে ঘুরে এসে গাবিতাকে জানায় গাবিতার বাবা হোস্টেলে ফোন করেছিলেন যে কোনো মুহূর্তে এসে পড়তে পারেন গাবিতা তড়িঘড়ি করে টেবিলক্লথ আবার যথাস্থানে পেতে দ্যায়

বুঝতে অসুবিধা হয়নাটেবিলক্লথের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে পরবর্তী পর্যায়ে!

গাবিতা ওতিলিয়া ভালো করেই জানে অ্যাবরেশনের জন্য কোনো নার্সিংহোম বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয় যা করার বাইরে থেকে কাউকে ডেকে এনে করাতে হবে তাও খুব গোপনে যা এই হোস্টেলে সম্ভব নয় গাবিতা অ্যাবরেশনের জন্য একজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে রেখেছে তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে সেই ডাক্তারের পছন্দ মতো বুক করা হয়েছে একটি হোটেল কিন্তু কিছুটা নাম বিভ্রাট ২৪ ঘন্টা আগে ৫০বুকিং চার্জ না দেওয়ায় হোটেলের ঘর কনফার্ম হয়নি অন্য হোটেলে প্রায় ডবলের বেশি দামে একটা ঘর বুক করতে হলো ফলে ওদের সঞ্চিত অর্থ থেকে হোটেল চার্জ দিয়ে যা থাকলো তাতে ডাক্তারের পুরো দাবি মেটানো সম্ভব নয় ডাক্তার বেবে প্রথম থেকেই রেগে ছিল তার পছন্দের হোটেল বুক করা হয়নি বলে দ্বিতীয়ত বর্তমান হোটেলে ঢুকতে তার আইডি কার্ড জমা রাখতে হয়েছে যা তার পক্ষে খুবই অস্বস্তির বিপদের কোনো ভাবে জানাজানি হলে বিপদ তৃতীয়ত গাবিতা তাকে জানিয়েছিল সে দু-মাসের প্রেগনেন্ট পরে কথাবার্তা পরীক্ষা করে জানলচার মাসেরও বেশি প্রেগনেন্ট গাবিতা! এবং এই অবস্থায় অ্যাবরেশন খুবই বিপদজনক মার্ডারকেসে ফেসে যাওয়ার সম্ভবনাডাক্তার বেঁকে বসল

একপ্রকার জিনিসপত্র গুছিয়ে ডঃ বেবে বেরিয়ে যাচ্ছিল দুজনে কোনোপ্রকার তাকে আটকায় কিন্তু সমাধান?

টাকার কথা আসাতেগাবিতার দিকে তাকিয়ে ডাক্তার বেবে বললআমি কি তোমাকে টাকার কথা বলেছিলাম ফোনেসব কি আর টাকা দিয়ে হয়?

মানে? ডাক্তার অপারেশন করে টাকা চাইবে না তো কী চাইবে?

তিনজনের কথাবার্তা থেকে বোঝা যায় ডঃ বেবে টাকার জন্য কাজ করতে আসেনি বললহোটেলের ভাড়া দিতেই তোমাদের ধার করতে হয়েছে কত টাকা আমাকে তোমরা দিতে পারো৩০০০ টাকার জন্য আমি এতো বড় রিস্ক নেবো?

ডাক্তারের মন টাকাতে গলার নয়, বোঝা গেল! অন্য ধান্দা রয়েছে! দুই বান্ধবী অনুনয় বিনয় করলোকিছুদিনের মধ্যে তারা টাকা দিয়ে দেবে বেবে কিছুতেই রাজি হলো না এবং তার হাবভাব কথা বার্তা থেকে বুঝতে অসুবিধা হলো নাবিনিময়ে দুজনকে না হোকঅন্তত একজনকেযেহেতু গাবিতা ওই মুহূর্তের উপযোগী নয়তাই ওতিলিয়াকে ভোগ করতে চায় সে!

গাবিতা প্রচন্ড হতাশ অনুতপ্ত! কিন্তু কী করবেওতিলিয়া তাকে আস্বস্ত করলো বন্ধুর জন্য এটা করা ছাড়া আর তো এই মুহূর্তে কোনো উপায় নেই!



একটি মাত্র ঘরগাবিতা বাইরে বেরিয়ে এলো। এমন বিশ্রী পরিস্থিতির সম্মুখীন যে হতে হবে কল্পনাতেও ছিল না! ডঃ বেবের মনে যে এই ছিল সে বুঝে উঠতে পারেনি। উত্তেজনায় তার হাত কাঁপছিল! সিগারেট ধরিয়েও খেতে পারল না। তার সামান্য অসংযম ও অসতর্কতায় কী সব ঘটে চলেছে। বান্ধবী ওতিলিয়াকে চরমতম অপমানের মধ্যে পড়তে হলো তারই জন্য। গাবিতার বডি ল্যাংগুয়েজ ও ভাবে ফুটে বেরোচ্ছে সে অপরাধ বোধের চিহ্ন! তার আর্থিক সংকটের জন্য ওতিলিয়াকে তার বয়ফ্রেন্ড অডির কাছে টাকাই ধার করতে হয়নি নারীত্বকেও বিসর্জন দিতে হলো একজন শয়তান ডাক্তারের কাছে! আর পারলোনা বাইরে দাঁড়াতে। অস্থির ভাবে দরজা খুলে সোজা সে বাথরুমে ঢুকে পড়লো পাশের ঘর থেকে যাতে তার কানে বেবের লালসার শব্দ কানে না আসতে পারে, গাবিতা জোরে বেসিনের কল খুলে কমোডের ওপর বসে থাকল তখনও তার হাত কাঁপছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে ওতিলিয়া বাথরুমে প্রবেশ করে বাথটবে অনেকক্ষণ ধরে তার অপবিত্র যৌনাঙ্গ জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে ডাক্তার বেবের পাপ ধুয়ে দিতে থাকল 



গাবিতা অয়েল-ক্লথ আনতে ভুলেছে প্রথম দৃশ্যে টেবিলে পাতা যে ওয়েল-ক্লথ সে গোছাচ্ছিল কিন্তু বাবা আসার সংবাদে আবার পেতে দিয়েছিল সেটা আর আনা হয়নি অথচ হোটেলের সাদা চাদর পাতা খাটে পাতা দরকার একটা প্লাস্টিক কভার! ডাক্তার বেবে বার বার সেকথা বলে দিয়েছিল গাবিতা আলমারি থেকে একটা ক্যারি ব্যাগ বের করে মাঝ বরাবর কেটে বিছানায় পাতল বেবের নির্দেশ মতো পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল পাতা প্লাস্টিকের ওপর ডঃ বেবে ঠান্ডা মাথায় কর্তব্যে অবিচল থেকে একটি নলের সাহায্যে গাবিতার যোনিদ্বারে ফ্লুইড চালান করে নলটাকে একদিকের থাই-এর সঙ্গে টেপ দিয়ে আটকে দিল সব হয়ে যাওয়ার পর দুজনকেই ভালো করে বুঝিয়ে দিল কী করতে হবেকোনো একটা সময় আপনা থেকেই বেবি-ভ্রুন বেরিয়ে আসবে ওই বেবিকে যেন টয়লেটে না ফ্যালা হয় টয়লেট জ্যাম হয়ে যেতে পারে এমনকি টুকরো করে কেটেও না মাটিতে পোঁতা যাবে না কুকুর খুঁড়ে বের করে আনতে পারে ভালো হয়, কোনো দশতলার ছাদ থেকে গারবেজে ছুড়ে ফেলে দেওয়া কেউ বুঝতে পারবে না

সব বুঝিয়ে বেরিয়ে গেল ডাঃ বেবে



বেশ কিছুক্ষন কারো মুখে কোনো কথা নেই গভীর নিঃস্তব্ধতা ঘরের মধ্যে গাবিতা একবার শুধু বলল, 'থ্যাংকস্‌!তাতেই যেন ওতিলিয়ার বিচলিত হওয়া চোখ ফেটে অশ্রু বেরিয়ে আসতে চাইলেও সে নিজেকে সামলে গাবিতাকে কিছু প্রশ্ন করল যদিও সে জানে, যা যাওয়ার সবই তার গ্যাছে এখন জেনেই বা কীকেন গাবিতা তাদের পরিচিত মহিলা ডাক্তার রামোনাকে দিয়ে অ্যাবরশন না করিয়ে শয়তান বেবেকে দিয়ে করালকেন যথাসময়ে বেবের কথা মতো হোটেল কনফার্ম করা হলো না? তা যদি হতো তবে এতো বাড়তি টাকার হোটেলে আসতেও হতো না, আর তার এমন চরম সর্বনাশও হতো নাগাবিতা জানালদুই থেকে তিন মাসের মধ্যে হলে অ্যাবরশন রামোনার পক্ষে সম্ভব ছিলতার বেশি হলে ডাক্তার বেবেই ভালো বেবে প্রায় একই সময়ের তাদের আর এক বান্ধবীর অ্যাবরেশন করেছে

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর ওতিলিয়া তার বয়ফ্রেন্ড অডি' মায়ের জন্মদিনের পার্টিতে যাওয়ার জন্য পোশাক পরতে থাকল গাবিতা যেন শর্ষে ফুল দেখল চোখে এই অবস্তায় কী করে একা থাকবে সে? ওতিলিয়া বললএকবার শুধু যাবে আর আসবেঘন্টাখানেকের মধ্যেই ফিরে আসবে গাবিতার বাধা দেওয়ার কোনো জায়গা ছিল না হোটেলের দরজা বাইরে থেকে চাবি লাগিয়ে ওতিলিয়া বেরিয়ে গেল

স্বাভাবিক ভাবেই অডির বাড়িতে গিয়েও ওতিলিয়া সহজ হতে পারল না অডির মায়ের অন্যান্য বন্ধু বান্ধবীরা নানান মজা গানের সঙ্গে অংশ নিলেও তার মনে এতটুকু আনন্দ নেই একমাত্র অডি সব লক্ষ্য করলো বারবার জানতে চাওয়ায় গাবিতার কথা জানালো অডিকে স্বাভাবিক ভাবেই অডি বিন্দুমাত্র খুশি হয়নি ওতিলিয়া বললধর আমিই যদি প্রেগনেন্ট হতামঅডি অবাক হলো, ওতিলিয়ার মুখে কেন এমন কথাওখান থেকেই দুবার হোটেলে ফোন করে গাবিতার খোঁজ নিতে চাইল, কিন্তু ফোনে পেল না কাউকে ওতিলিয়া চিন্তিতদুম করে বেরিয়েও পড়ল অডির বাড়ি থেকে অডি বার বার অনুরোধ করলো, অন্তত তার মা'কে বিদায় জানিয়ে যাওয়ার জন্য ওতিলিয়া কর্ণপাত করলো না এমনকি লিফট আসার দেরি দেখে সিঁড়ি দিয়েই নেমে এল রাস্তায়

বেশ রাত্রি হয়েছে তখন রাস্তায় মানুষগাড়ি নেই বললেই চলে ওতিলিয়া গাড়ির জন্য অপেক্ষা না করে প্রথমে হাঁটা, পরে ছোটা শুরু করলো অনেক পরে একটা ট্রাম ধরে হোটেলের রিসেপশন থেকে যখন চাবি নিতে গেলদেখল রাত গভীর হতেই রিসেপশনের চেহারাও পাল্টে গ্যাছে সকালের মহিলা রিসেপশনিস্টের জায়গায় যে পুরুষটি এসেছেদলবল নিয়ে ওখানেই মদের আসর বসিয়েছে ওতিলায়া চাবি নিয়েই ছুটল ওপরে দেখল অন্ধকার ঘরে গাবিতা ঘুমোচ্ছে তোয়ালে জড়িয়ে গাবিতাকে জাগালো গাবিতা জানাল, বেবি-ভ্রুণ বাথরুমের মেঝেতে গাবিতা বললো, ছুঁড়ে না ফেলে কবর দিলে ভালো হতো না? ওতিলিয়া কোনো উত্তর দিল না বাথরুমে গিয়ে দেখল তোয়ালে জড়ানো প্লাস্টিকের মধ্যে রক্তাক্ত বেবি-ভ্রুণ পড়ে আছে মেঝেতে বেশ কিছুক্ষণ অপলক সে দিকে তাকিয়ে একটা ব্যাগের ভেতর তোয়ালে জড়ানো বেবিকে নিয়ে নিচে নেমে এলো সে সময় রিসেপশনে কেউ ছিল না ওতিলিয়া বেরিয়ে এলো রাস্তায়

প্রচন্ড নার্ভাস ওতিলিয়া কোথায় যে ফেলবে বুঝতে পারলো না ভ্যাটে ফেলতে গেলসঙ্গে সঙ্গে দুটো কুকুর ঘেউ ঘেউ করে এগিয়ে এলো হয়তো রক্তের গন্ধ পেয়েছে ছুটল সেখান থেকে হঠাৎ দেখল রাস্তার বাঁকে পুলিশের গাড়ি ভয়ে কাঠ হয়ে পাশের একটি বহুতলের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে খুব সন্তপর্ণে পা টিপে টিপে ছাদে এল



পরের দৃশ্যে ওতিলিয়াকে হোটেলে ফিরে আসতে দেখা যায় রুমে এসে গাবিতাকে পেল না সে খুঁজতে খুঁজতে নিচে রেস্টুরেন্টে দেখতে পেল গাবিতাকে সে খাবারের অর্ডার দিয়ে চুপ করে বসে রয়েছে ওতিলিয়া তার উল্টোদিকের চেয়ারে বসলো গাবিতা তার জন্য কিছু খাবের অর্ডার দিতে চাইলেও ওতিলিয়া ওয়েটারকে শুধুমাত্র মিনারেল ওয়াটার দিতে বলল গাবিতা আবার জানতে চাইলো বেবিকে কবর দিয়েছে কীনা! ওতেলিয়া বিষয়ে কোনো কথা আর আলোচনা না করতে বলল গাবিতাকে
  
ছবির নাম '4 months 3 weeks and 2 days' (2007) নাম শুনলেই বোঝা যায় গাবিতার প্রেগনেন্সির সময় কাল পরিচালক Cristian Mungiu, বয়স বর্তমানে ৪৯ বছর গতবারের আলোচিত 'দ্য ব্যান্ড' ভিজিটছবির পরিচালকের মতো ক্রিস্টিয়ানকেও এযুগের পরিচালক বলা যেতে পারে  4 months 3 weeks and 2 days দেখতে দেখতে মনে হওয়ার কথা নয় এটা একটা সিনেমা স্ক্রিপ্টস্যুটিং, অ্যাক্টিংমিউজিক ইত্যাদি কয়েকটি অধ্যায়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয় একটি পূর্ণ দৈর্ঘের সিনেমা অথচ এই সিনেমা দেখলে মনে হবে যেন গোপন সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ঘটনাগুলো সেগুলোকেই যেন সাজিয়ে এডিট করে বানানো হয়েছে ঘণ্টা দেড়েকের পূর্ণ দৈর্ঘের একটা  সিনেমা

ছবির প্রধান চরিত্রে বিশেষ কেউ নেই মূলত তিনটি চরিত্র, ওতিলিয়া, গাবিতা এবং ডঃ বেবে কাউকেই বলা যাবেনা সে মহান, বা ত্রুটি মুক্ত কোনো চরিত্রই দর্শকের থেকে সীমপ্যাথি আদায় করতে চায়নি বা পরিচালেক কাউকে বেশি সীমপ্যাথি দ্যাখানোর সুযোগ করে দিয়েছে!

ডায়লগ এতো স্বাভাবিক, বাস্তবসম্মত, স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে এমন ডায়ালগ বসানো অবিশ্বাস্য মনে হয় এবং ডায়ালগ বলার সময় কোনো চরিত্রই বিন্দুমাত্র নাটকীয়তা প্রকাশ ঘটায়নি যে কারণে আগেই বলেছি, মনে হয় যেন সিসিটিভির সম্মুখে ঘটনাটা ঘটছে আমার তো মনে হয় এই কথপোকথন শোনার জন্যই বার বার ছবিটি দ্যাখা যায় এতো স্বাভাবিক কথপোকথন ভিত্তিক ছবির আলোচনা আগে করিনি

বিন্দুমাত্র সিনেমাটিক ব্যপার কোথাও নেই ক্যামেরার সামান্যতম কারিগরিও না পূর্বে যেসব ছবি নিয়ে আলোচনা করেছি সব টিতেই সিনেমাটিক ব্যাপার রয়েছে নিদেন পক্ষে ক্যামেরার অ্যাংগেল দেখে বোঝা যায় পরিচালক ক্যামেরার অ্যাংগেলের মাধ্যমেও কিছু বক্তব্য বোঝাতে চান

সিনেমায় মিউজিকের মুখ্য ভূমিকা থাকে পূর্বে আমার আলোচিত ছবিতে মিউজিকর অন্যতম মুখ্য ভূমিকার ছিল এবং সে নিয়ে কথা বলেছি হতে পারে মিউজিকের ওপর আমার বাড়তি কিছু ভালোবাসা আছে, তাই! তথচ ছবিতে কোনো মিউজিকের ব্যবহারই নেই সিসিটিভিতে যে শব্দ ধরা পড়ে, সে শব্দই দর্শকরা শুনতে পেয়েছে আলাদা করে বাড়তি কোনো শব্দ সংযোগ করা হয়নি

কেন এমন প্রকাশ ভঙ্গি? কেন এতো রুক্ষ, শুষ্ক, নাটকিয়তা হীন? কোনো বিশেষ অর্থে কী? হয়তো তাই, এমন একটা ঘটনা নির্ভর ছবি যা চুড়ান্ত কঠিন বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে। যেখানে দাঁড়িয়ে হয়তো কাব্য করা যায় না। শিল্পও হয়তো হাস্যকর মনে হতে পারে। অনেকটা যেন ‘লিজা ফর এভার’র মতো। ১৬ বছরে লীলাকে কঠিন বাস্তবের চোরা বালিতে হারিয়ে যেতে হয়েছিল। তবুও সে ছবিতে পরিচালক অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছেন। অমন না হয়ে এমন যদি হতো... এরকম অনেক স্বপ্ন দর্শককে দেখিয়েছে। এখানে কিন্তু বিন্দু মাত্র স্বপ্ন নেই। পরিচালক তার বন্ধুর কাছে শুনেছিল ১৫ বছর আগে ঘটনাটা। তারও ৫ বছর (১৯৮৭) আগের ঘটনা। দেখলেই বোঝা যায়, গভীর ভাবে পরিচালককে নাড়িয়ে ছিল ঘটনাটা। না হলে এভাবে প্রকাশ করা যায় না

অ্যাবরশনের কড়াকড়ি স্রেফ অ্যাবরেশন করাতে দুটি মেয়েকে যে টেনশন নিতে হয়েছে, সর্বোপরি একজন কলেজ ছাত্রীকে ইজ্জত পর্যন্ত দিতে হয়েছে এর সঙ্গে তৎকালীন রোমানিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাও টের পাওয়া যায় ছবি দেখলে বোঝা যায়, শহরটা মোটেই ভালো নেই বিশেষ করে রাত নামলেই শহরটা কেমন যেন মানুষের কাছে নিরাপদ থাকেনা অ্যাবরেশনের ক্ষেত্রে যতটা কড়াকড়ি অন্য বিষয়ে প্রশাসন যে উদাসীন তা বোঝা যায়! সমস্ত দেখিয়ে পরিচালক সে সময় রোমানিয়ার কমিউনিস্ট শাসনের কিছুটা সমালোচনা হয়তো করতে চেয়েছেন! তবে আমি সে নিয়ে কোনো আলোচনা করতে চাইনা

Cristian Mungiu / পরিচালক


ছবিটা সংগ্রহ করা খুব কঠিন না দেখে ফেলুন, ভালো লাগবেই বিশেষ করে উপস্থাপনা ছবির অন্যতম সম্পদ

2 comments: